Header Ads

Header ADS

পীরগঞ্জ উপজেলা

পীরগঞ্জের সামাজিক পরিবেশ
পীরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান। বাকি সব হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ আদিবাসী। শতকরা ৯৫ জন মানুষই কৃষি জীবি। অন্যান্যরা ব্যবসা বানিজ্য ও চাকুরিজীবি।
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাঁক-সব্জী ও ডাল-ভাত সকলেরই প্রধান খাদ্য। তাছাড়াও তাল পিঠা, তেল পিঠা, খই-মুড়কি সহ নানা রকম মিষ্টান্ন এবং ফল-ফলান্তি তাদের প্রিয় খাদ্য। লুচি, পুরি, সিংগাড়া, চা-নাস্তা, হাট-বাজার ও শহর-বন্দরের হোটেল-রেস্তারায় খেয়ে থাকে তারা।
পোশাক পরিচ্ছদ ব্যাপারে কারও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সার্ট, প্যান্ট, পাজামা, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, ফতুয়া, গেঞ্জি, গামছা এ গুলো সব সম্প্রদায়ের পুরুষেরাই ব্যবহার করে। হিন্দু-আদিবাসীদের মধ্যে ধুতির ব্যবহার এখনও দেখা যায়। বিবাহিতা মহিলারা প্রধানতঃ শাড়ি, ছায়া, ব্লাউজ ব্যবহার করে। শিক্ষিতা ও চাকুরিজীবি মহিলারা অনেকেই মেক্সি ও থ্রিপিচ ব্যবহার করেন। স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রিরা ব্যবহার করে স্যালোয়ার, কামিজ, ওড়না (থ্রিপিচ)। ইদানিং মুসলিম পরিবার গুলোতে প্রায়ই বোরখার ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। তারা নানা রকম প্রসাধনীও ব্যবহার করে থাকেন। 
যুব সমাজের মধ্যে ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, হকি, ক্যারাম, দাবা প্রভৃতি খেলা-ধুলার প্রচলন আছে। দেশীয় খেলাধুলা এখন আর দেখা যায় না। তবে গ্রামীণ মেয়েদের মধ্যে বৌ-চি, গোল্লাছুট প্রভৃতি খেলা কদাচিৎ দৃষ্ট হয়। 
সমাজে বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন দেশ-বিদেশের খবরা-খবর ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমূহের পাঠক, দর্শক, এবং উপভোগকারীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি সমাজে কিছু খারাপ দিকও লক্ষ্য করা যায়। দুশ্চরিত্রের কতিপয় বেকার যুবক বিভিন্ন ক্লাব সমিতির সুবাদে রাতে সিডি, ভি,সি, আর এ অশ্লীল ছবি দর্শন, সুদের ব্যবসা, মদ-জুয়ার আড্ডা, রাহাজানি, ছিনতাই এর মত অসমাজিক ক্রিয়া কলাপে জড়িত হচ্ছে। 
ভাং-গাঁজা সেবীদের খপ্পরে পড়ে অল্প বয়সে কংকাল সার হচ্ছে অনেক কিশোর। অন্য দিকে শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম কর্মসহ সৃজনশীল প্রতিভারও বিকাশ ঘটছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা এবং ভোকেশনাল শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে অনেকের । কম্পিউটার, ইন্টারনেটে আসক্তি জন্মেছে অনেক শিক্ষার্থীর। সাহিত্য সাংস্কৃতিক বিষয়েও পিছিয়ে নেই পীরগঞ্জ। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান গুলোতে যুবক, যুব-মহিলা মিলে নাটক, থিয়েটারসহ প্রায়ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে থাকে তারা। 
মুসলমানদের মধ্যে দুটি ঈদ উৎসব। হিন্দুদের পূজা-পার্বনসহ বিবাহ, আকিকা, প্রভৃতি অনুষ্ঠানে একে অপর সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ করে থাকে। এখানে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব নেই। সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবসাজীবি, চাকুরিজীবি, সহ কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, নাপিত, ধোপা, মুচি, মেথর পেশাজীবি মানুষের অসম্প্রদায়িক আবাসস্থল এই পীরগঞ্জ। সব মিলে পীরগঞ্জের সামাজিক পরিবেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। 
 
পীরগঞ্জের অর্থনৈতিক অবস্থা 
পূর্বেই বলা হয়েছে যে, পীরগঞ্জের শতকরা ৯৫ জন মানুষই কৃষি নির্ভর। সেহেতু এ এলাকার মাটি অত্যন্ত উর্বর। পলি ও পলি মিশ্রিত দো-অাঁশ মাটি। সেহেতু এ মাটিতে ধান, পাট, ইক্ষু, তামাক, গম, ভূট্টা, আলু-বেগুন, পটল, ডাল, সরিসা, মিষ্টি কদু, লাউ, কপি, শাক সব্জী, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁয়ারা, পেঁপে, প্রভৃতি খাদ্য-শস্য, ফলমূল ও জ্বালানী কাঠ প্রচুর জন্মে। 
বিল ,ঝিল, পুকুরে দেশি - বিদেশী মৎস্য সম্পদে এলাকার মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করেও শহরে রপ্তানি হয়ে থাকে। হাঁস-মুরগি, গবাদী পশু পালনেও এলাকার মানুষ তৎপর। কোন কোন মহল্লায়, কুঠির শিল্পেরও প্রসারতা আছে। 
পীরগঞ্জ উপজেলা শহরের চারদিকে জালের মত বিস্তার করে আছে চতরাহাট, খালাশপীরেরহাট, ভেন্ডাবাড়িরহাট, সানেরহাট, মাদারগঞ্জহাট, বালুয়াহাট, টুকুরিয়া, বড় দরগা প্রভৃতি ছোট বড় হাট-বাজার। এ সকল হাট-বাজারের সাথে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, দিনাজপুর, ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগ উন্নত। সেহেতু পীরগঞ্জের উৎপাদিত কৃষি ও আমিষ জাত দ্রব্য সামগ্রী পরিবহনে সুবিধে জনক। ফলে উৎপাদিত পণ্য ক্রয় - বিক্রয়ের মাধ্যমে যথেষ্ঠ অর্থায়ন ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে করে পীরগঞ্জবাসী একদিকে যেমন আত্ম-নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। অন্য দিকে তেমনি দেশে আর্থিক প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখিত হাট-বাজারে দোকান-পশার দিয়েও অনেকেই আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছে। 
 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.